রাজশাহীতে ছাড়পত্র ছাড়াই ফসলি জমিতে করা হচ্ছে ইটভাটা

রাজশাহী

পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়েই রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় তিন ফসলি জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে একটি ইটের ভাটা। এই ইটভাটা নির্মাণের বিষয়ে চরম আপত্তি তুলেছেন আশপাশের জমির কৃষকরা। তাই দুই মাস আগেই তারা এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু এখনও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

গোদাগাড়ীর মাটিকাটা ইউনিয়নের পূরাপাড়া গ্রামে এই ইটভাটা করা হচ্ছে। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে আবদুর রাজ্জাক নামে চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক ব্যবসায়ী এখানে ভাটা করছেন। বর্তমানে গোদাগাড়ীর জামাদান্নি এলাকায় ‘মেসার্স বিবিএফ ব্রিকস’ নামে রাজ্জাকের একটি ইটভাটা আছে। স্থানীয়দের চরম বিরোধীতার কারণে তিনি সেখানে আর ভাটা চালাতে পারছেন না। তাই সেই ভাটাটিই সরিয়ে পূরাপাড়ায় আনা হচ্ছে। এখানেও কৃষকরা বিরোধিতা করছেন।

জানতে চাইলে মুঠোফোনে আবদুর রাজ্জাক বলেন, জামাদান্নিতে লোকজন ভাটা চালাতে দিতে চাইছেন না। তাই পূরাপাড়া আনা হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাগজপত্র ঠিক করা হচ্ছে। তারপর আবেদন করা হবে। ছাড়পত্র পাওয়ার আগেই নির্মাণ কাজ শুরু কেন জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে তিনি কথা বলতে চাননি।

কৃষকদের লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, পুরাপাড়া মৌজায় তাদের সবার ফসলি জমি রয়েছে। বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ থাকায় তাদের জমিতে বছরে তিনবার ধান চাষ করা সম্ভব হয়। জমির আশপাশে রয়েছে আম ও পেয়ারা বাগান। পাশেই পুরাপাড়া গ্রাম। এই গ্রাম ঘেঁষে তাদের ফসলি জমির পাশে এই ইটভাটা স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে সেখানে কয়েকটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে ইটভাটা হলে তাদের ফসল নষ্ট হবে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, বার বার গ্রামবাসীর বাঁধার মুখে জামাদান্নির ইটভাটাটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন আবদুর রাজ্জাক। এখন পূরাপাড়ায় ফসলি জমিতে সেই ইটভাটা স্থানান্তরিত করার প্রচেষ্টা চলছে। এ জন্য আবদুর রাজ্জাক কিছু জমির মালিককে মোটা অঙ্কের অর্থ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে জমি ইজারা নিয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি পুরাপাড়া মৌজার বেশ কয়েক বিঘা জমি ইজারা নিয়েছেন। আরও জমি নেয়ার প্রচেষ্টা করছেন।

স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, পূরাপাড়ায় ইটভাটা নির্মাণ করলে তাদের তিন ফসলি জমির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলন কমবে। ইটভাটার কারণে আম এবং পেয়ারা বাগানও নষ্ট হয়ে যাবে। তাছাড়া পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। এতে পাশের পুরাপাড়া গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যহানি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। আর ইটভাটার কারণে তাদের জমির ফসলের উৎপাদন কমে গেলে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে মারাত্মক দুর্ভোগের মধ্যে পড়বেন। তাই তারা এই ইটভাটা নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, অভিযোগটি তিনি পেয়েছেন। আবদুর রাজ্জাককে ডেকে পাঠিয়েছেন। তিনি আসেননি। মনির হোসেন বলেন, আবদুর রাজ্জাক ভাটা করছেন কিন্তু অবস্থানগত ছাড়পত্রের জন্যই আবেদন করেননি। তাই পরিবেশের ছাড়পত্রও নেই। এসব ছাড়া তো ভাটা হতে পারে না। সেটা অবৈধ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, উপজেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটির সভাপতি হলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। কোথাও পরিবেশের বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকলে সেটা প্রাথমিকভাবে তারই দেখা উচিত। জানতে চাইলে ইউএনও আলমগীর হোসেন বলেন, ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণের বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজ-খবর নিয়ে তিনি এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন। চাষিদের আপত্তি থাকলে ইটভাটা হবে না।

জেলা প্রশাসক মো. আবদুল জলিল বলেন, তিনি কয়েকদিন আগেই রাজশাহীতে যোগ দিয়েছেন। অভিযোগের বিষয়টি তারও জানা নেই। তবে তিনি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (সার্বিক) সঙ্গে কথা বলে দ্রুতই এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। কৃষি আর পরিবেশের ক্ষতি কোনভাবেই করতে দেয়া হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published.