‘ভিক্ষুকমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে গ্রামীণ ব্যাংক’

বানিজ্য

নিখাদ বার্তাকক্ষ : ভিক্ষুকমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে গ্রামীণ ব্যাংক। এলক্ষ্যে ৮৩ হাজার ৩৬৭ জন ভিক্ষুককে সংগ্রামী সদস্য কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল মজিদ।
তিনি জানান, সুদমুক্ত ঋণ বিতরণের মাধ্যমে ভিক্ষুকদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। তাদের ঋণ পরিশোধের কোন সময় থাকে না। এমনকি কিস্তি পরিশোধের কোন চাপও দেয়া হয় না।
আজ রাজধানীর মিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে তারা দেশের দরিদ্রপ্রবণ ৩টি জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করার টার্গেট হাতে নিয়েছে। পর্যায়ক্রমে পুরো দেশকে ভিক্ষুকমুক্ত করা হবে। ইতোমধ্যে ২২ হাজার ভিক্ষুক ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে সংগ্রামী সদস্য ক্যাটাগরি থেকে সাধারণ সদস্যে অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন।
এসময় গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুর রহিম খান, উপ-মহাব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ উদ্দিনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ব্যাংকের চেয়ারম্যান জানান, গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য সংখ্যা এখন ১ কোটির মাইলফলক অতিক্রম করেছে। বিশ্বের কোন ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানে এককভাবে এত সদস্য নেই। ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক যখন নোবেল পুরস্কার পায়, তখন এর সদস্য ছিল ৬৯ লাখ ৮ হাজার ৭০৪ জন। গ্রামীণ ব্যাংকের সাথে সদস্য পরিবারের প্রায় ৪ কোটি সদস্য জড়িত রয়েছে। এই ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণের সদস্যরা বর্তমানে এককভাবে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিয়ে থাকেন।
তিনি জানান, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে গ্রামীণ ব্যাংকের অর্জনে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। সদস্যদের মধ্যে ঋণ বিতরণ ও আদায়ে উল্লেখ্যযোগ্য সফলতা এসেছে। গত জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির আমানতের পরিমান দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। একই সময়ে আদায় করা ঋণের পরিমান হয়েছে ১৪ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। তারমধ্যে মন্দ ঋণ আদায় ১৪০ কোটি ৮২ লাখ টাকা। পাশাপাশি অনিয়মিত ও চুক্তিবদ্ধ ঋণ আদায় হয়েছে ১১১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ও অনিয়মিত ঋণ হ্রাস পেয়েছে ১৭২ কোটি টাকা। আর প্রতিষ্ঠানটির সহজ ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার, বিশেষ বিনিয়োগ ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজারটি ও বিশেষ মাসিক কিস্তির ঋণের সংখ্যা বেড়েছে ৪৫ হাজার ৪০৬ টি।
তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ ধারণা করেছিলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ইউনূস ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি চলতে পারবে না। কিন্তু আজ সেই ধারণা অসত্য প্রমাণিত করতে সক্ষম হয়েছে বর্তমান ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নেতৃত্বে বিশাল জনবলের একটি সুশৃংখল বাহিনী। এমনকি ড. ইউনূসের প্রভাব বলয় থেকে বের হওয়ার পরে ব্যাংকটি সাফল্যের নবদিগন্তে উপনীত হয়েছে। ২০১১ সালের পর ড. ইউনূস কোনোভাবেই গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। ২০২০ সালে করোনার মধ্যেও সর্বোচ্চ ৪৮১ কোটি টাকা মুনাফার রেকর্ড সৃষ্টি করে গ্রামীণ ব্যাংক প্রমাণ করেছে যে ড. ইউনূস ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি ভালো চলতে পারে।’
গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুর রহিম খান বলেন, ‘২০১১ সালে অধ্যাপক ড. ইউনূস বিদায় নেয়ার পরে তার সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ প্রতিষ্ঠানে তার কোন শেয়ার নেই। গ্রামীণ ব্যাংকের ২৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক সরকার। আর বাকি ৭৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা সদস্যদের। সবমিলে ড. ই্উনূস গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বিদায় নেওয়ার পর ব্যাংকটি আগের চেয়ে অনেক ভাল চলছে। আর ২০২২ সালে গুরুত্বপূর্ণ সব সূচকে অগ্রগতির উচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোন সদস্য বা তার স্বামী মারা গেলে তাদের ঋণ মাফ করে দেয়া হয়। এমনকি মৃত ব্যক্তির দাফনকার্য সম্পন্ন করার জন্য তাৎক্ষণিক একটা অর্থ সহায়তা দেয়া হয়। এছাড়া ঋণ গ্রহীতা সদস্যের আত্মীয় মারা গেলেও তাকে সমস্যদুর্গত বিবেচনায় তার কাছ থেকে ঋণের সাপ্তাহিক কিস্তি আদায় না করার বিধান রয়েছে। এমন নীতি থাকায় কোন ঋণগ্রহণকারী ব্যক্তির মৃত্যু হলে লাশ আটকায়ে ঋণ আদায়ের কোন সুযোগ থাকে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published.