সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: ছাত্রলীগ থেকে উঠে আসা ৮০ দশকের ছাত্রনেতা সাহাদাত হোসেন সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনে এবারও মেয়র পদে ভোটের মাঠে রয়েছেন। পৌরসভার এক প্রান্ত আরেক প্রান্ত পর্যন্ত সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তিনি মানুষের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। তাকে ছাড়া এখনো পর্যন্ত এভাবে আর কোন প্রার্থীকে দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন সাধারণ মানুষ।
সাহাদাত হোসেন সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। তার সহধর্মীনি সাতক্ষীরা জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদিকা সাবিহা হোসেন এবং ছেলে আজমীর হোসেন ফারিব সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগ নেতা।
সাহাদাৎ হোসেন ১৯৬৭ সালের ৩০ মে সাতক্ষীরা শহরের একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক। আব্দুর রাজ্জাক সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক ছিলেন। ৮০ দশকে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে বাংলদেশ ছাত্রলীগের মাধ্যমে সাহাদাৎ হোসেন রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যদিয়ে সাহাদাৎ হোসেন টানা ৪০ বছর রাজনৈতিক জীবন পার করেছেন।
তিনি সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে ৮০’র দশকে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে একাধিকবার মামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। তিনবার কারাবরণ করেন সাহাদাৎ হোসেন।
এছাড়া তিনি সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটিতে দুইবার এক নম্বর যুগ্ম-আহবায়ক ছিলেন। পরে সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগের কাউন্সিলে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান। সাহাদাৎ হোসেন খালেদা জিয়া বিরোধী অসহযোগ আন্দোলনের সম্মুখসারির যোদ্ধা ছিলেন। খালেদা-নিজামী ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে সাহাদাৎ হোসেন পরিবারসহ তৎকালীন ক্ষমতাশীন দলের নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হন।
২০০৮ সালে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হলে, শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে রাজপথে সক্রিয়ভাবে দলীয় সকল আন্দোলন ও সংগ্রামে সাহাদাৎ হোসেন বঙ্গবন্ধু মুজিব আদর্শের সৈনিক হিসেবে অংশ গ্রহণ করেছেন। তিনি দলীয় সাংগঠনিক দক্ষতায় সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তিনবার সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন। একই সাথে তিনি সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। সততা ও নিষ্ঠার সাথে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় ঘোষিত সকল আন্দোলন সংগ্রামের ডাকে নিজেকে সক্রিয় রেখেছেন।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামাতের কেন্দ্রীয় নেতা মানবতা বিরোধী মামলায় আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুন্যালে মাও. দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসীর রায় ঘোষণা হলে জামাত-শিবির কর্তৃক মাও. দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর নি:র্শত মুক্তির দাবিতে সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আন্দোলনের নামে হরতাল ডেকে সারাদেশে গাছকাটা, রাস্তাকাটা, গাড়িতে পেট্রোলবোমা মেরে অগ্নিসংযোগ, বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষ হত্যা করাসহ জামাত-শিবিরের নাশকতার প্রতিবাদে সাতক্ষীরাতে সাহাদাৎ হোসেন দলীয় নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করে জামাত-শিবিরের নাশকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন।
সকল প্রতিকূলতার মধ্যদিয়েও সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহাদাৎ হোসেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাকে দলীয় সকল কর্মকান্ডে নিজেকে সক্রিয় রেখেছেন।
বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে করোনার মহামারি বাংলাদেশেও প্রভাব ফেলেছে। করোনা মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনায় পৌর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহাদাৎ হোসেন নিজের সামর্থানুযায়ী চেষ্টা করেছেন হতদরিদ্র মানুষের সেবা দিতে। তাদের সুখ-দু:খে পাশে দাঁড়াতে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সাহাদাৎ হোসেন ভয়কে জয় করে পৌর সভার ৯টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন পাড়া মহল¬ায় দিনে ও গভীর রাত পর্যন্ত নিজ মোটরসাইকেলে করে চাল, ডাল, আটা, আলু, পেঁয়াজ, লবণসহ খাদ্যসামগ্রী নিয়ে ঘরবন্দি মানুষের বাড়িতে বাড়িতে যেয়ে পৌঁছে দিয়েছেন। প্রাণঘাতি করোনার সংকটময় মুহূর্তে সাহাদাৎ হোসেনের প্রচেষ্টা নিজেকে সুরক্ষা রেখে পৌর নাগরিকদের ভালো রাখা। এছাড়া পবিত্র রমজান মাসে নিজে রোজা রেখে প্রতিদিন বিকাল হলেই শতশত ইফতারের প্যাকেট নিয়ে একেক দিন একেক এলাকায় ছুটে যান রোজাদারদের পাশে।
সাহাদাৎ হোসেন পৌরসভার নারিকেলতলা, কাটিয়ায় সাতক্ষীরা প্রবীন আবাসন কেন্দ্র (বৃদ্ধাশ্রম), খুলনারোড মোড়, নিউমার্কেট মোড়, ইটাগাছা মোড়, চালতেতলা, পুরাতন সাতক্ষীরা, সরকারি কলেজ মোড়, কাছারীপাড়া, সুলতানপুর, সার্কিট হাউজ মোড়, কামালনগর বৌবাজার, বাঁকালসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় ও রাস্তায় চলাচলরত নিম্নবিত্ত অসহায় প্রায় দুই হাজার মানুষের হাতে পৌছে দিয়েছেন ইফতার সামগ্রী। হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে দিয়েছেন সেমাই, চিনিসহ ঈদ সামগ্রী।
পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহাদাৎ হোসেন জানান, তিনি উন্নয়নে সাতক্ষীরা পৌরসভাকে একটি মডেল পৌরসভা হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহযোগিতায় সাহাদাৎ হোসেন সাতক্ষীরা পৌরসভার নাগরিকদের জীবন-মান উন্নয়নে ও রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্টসহ সকল অবকাঠামো উন্নয়ন বাস্তবায়নে এক কথায় একটি সুপরিকল্পিত সাতক্ষীরা নগরী গড়ার প্রত্যয়ে তিনি স্বপ্ন দেখেন।
পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহাদাৎ হোসেন তার স্বপ্ন বাস্তয়ানের লক্ষে গত ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনীত দলীয় মেয়র প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচনে শক্ত অবস্থানে থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
তিনি বলেন, দলীয় অভ্যন্তরীন সমস্যার কারণে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতীকে পৌর নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারেননি। সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে পূর্বের যেকোন ভেদাভেদ ও দলীয় কোন্দল ভুলে দলীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে আগামী পৌর নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে সাতক্ষীরা পৌরসভাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে চান সাহাদাৎ হোসেন ।