স্বপ্নে যাদের পঁচাত্তরের হাতিয়ারের গর্জন

প্রচ্ছদ

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) :

ইতিহাস বিকৃতির বাংলাদেশে ইতিহাসকে শুদ্ধ করার গুরু দায়িত্বটা ইদানীং কাঁধে তুলে নিয়েছেন বিরোধী দলের একজন বড় নেতা। ইদানীং উত্তরবঙ্গে নিজ এলাকায় গেলেই তিনি একেকটি অভিনব ঐতিহাসিক তত্ত্ব উপস্থাপন করে চলেছেন। সর্বশেষ তার মুখ থেকে জানা গেল পদ্মা সেতুর ভিত্তি প্রস্তুর নাকি দিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া, তাও এক জায়গায় না ফরিদপুর আর মাওয়া- এই দুই জায়গায়। পদ্মা সেতুকে নিজেদের কৃতিত্ব হিসেবে চালিয়ে দেয়ার আওয়ামী ষড়যন্ত্রের ঘোরতর নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির এই বড় নেতা। অভিযোগ করেছেন একইভাবে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু তৈরির কৃতিত্বও নাকি আওয়ামী লীগ একদিন বিএনপির কাছ থেকে কৌশলে কেড়ে নিয়েছিল।

 

॥ দুই ॥

কদিন আগের কথা। ওই উত্তরবঙ্গ সফরকালেই আরেক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এমনি আরেক ছিনতাইয়ের অভিযোগ এনেছিলেন এই একই ভদ্রলোক। সেবার তার অভিযোগ ছিল আওয়ামী লীগ নাকি সংবিধানের আওয়ামীকরণ করছে। সংবিধানের চার মূলনীতিকে পাল্টে দিয়ে তারা, তার ভাষায়, বাহাত্তরের আওয়ামী সংবিধান পুনঃপ্রবর্তনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাকে পাকাপোক্তভাবে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করছে বলে সেবার অভিযোগ এনেছিলেন মির্জা সাহেব।

॥ তিন ॥

কদিন আগে ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের ধাওয়া পাল্টাধাওয়ায় টানা উত্তপ্ত ছিল ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। নিস্তরঙ্গ রাজনীতির ময়দানে এই সহসা উত্তেজনা-উত্তাপও ছড়িয়েছিল ভালই। অনেকদিন পর কাজ খুঁজে পেয়েছিলেন রাজনৈতিক বিড করা সংবাদ মাধ্যমের সহকর্মীরা। ভালই কাভারেজ হয়েছে সেসব ধাওয়া-ধাওয়ির ছবিগুলো এদেশের কাগজে, ইলেক্ট্রনিক আর ভার্চুয়াল সব ধরনের মিডিয়াতেই।

॥ চার ॥

গত কদিন ধরেই রাজনৈতিক ময়দানে বিএনপির উত্তাপ ছড়ানোর প্রচেষ্টাগুলো লক্ষণীয়। ছুতায়-নাতায় তারা চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীন দল আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে মিডিয়ায় আসতে। আর এসব চেষ্টায় নিত্যই রসদ জোগান দিচ্ছেন দলটির বড় নেতারা। ছোট নেতারাও কম যাচ্ছেন না। তাদের ভাবসাব অনেকটা বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বিচি টাইপের।

॥ পাঁচ ॥

আমার ব্যক্তিগত গাড়িচালক নাসির। যথেষ্ট সমাজ সচেতন। সচেতন রাজনৈতিকভাবেও। সেদিন গাড়িতে উঠতেই জানতে চাইল ঢাকা ভার্সিটিতে হালের ছাত্রলীগ বনাম ছাত্রদল শোডাউনগুলোয় ছাত্রদলের ক্যাডারদের স্লোগান আমার নজরে এসেছে কিনা? ছাত্রদলের ক্যাডাররা এবার প্রকাশ্যেই পঁচাত্তরের হাতিয়ারের আরেকবার গর্জে উঠার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে তাদের স্লোগানে আর কর্মসূচীতে। নাসির জানাল এ নিয়ে ফেস বুকে একটা জোরালো স্ট্যাটাস দিয়েছে সে। জানিয়ে দিয়েছে, পঁচাত্তরের মতো অঘটন ঘটানোর দিবাস্বপ্নে কেউ যেন বিভোর না থাকে।

॥ ছয় ॥

আমরা অনেকেই বিএনপির হালের লাফালাফিকে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের প্রস্তুতি পর্ব বলে ভুল করছি। বিষয়টি আংশিক সত্য হতে পারে, কিন্তু পুরো সত্য কখনই নয়। আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার কোন আগ্রহ বিএনপির আছে বলে আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় না। আর তেমনটা থাকার কথাও নয়। দলের চেয়ারম্যান আর ভাইস চেয়ারম্যান যখন দ-িত আসামি, আর ‘শ্যাডো’ চেয়ারম্যান আসামি হিসেবে পলাতক, তখন নেতৃত্বহীন বিএনপির নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন যে একেবারেই দিবাস্বপ্ন, তা নিয়ে কারও কোনরকম সংশয়ই নেই।

॥ সাত ॥

আর কদিন পরেই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে পদ্মা সেতু। এটি শুধু দেশের জিডিপিতে এক শতাংশ বাড়তি প্রবৃদ্ধি যোগ করা কোন সেতু নয় কিংবা এর তাৎপর্য শুধু বিশ্বের ১১তম দীর্ঘ সেতু হিসেবেই সীমাবদ্ধ নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যেমন আছে স্ট্যাচু অব লিবার্টি যা তাদের মুক্ত বিশ্বের নেতৃত্বের প্রতীক, কিংবা ফ্রান্সের আছে আইফেল টাওয়ার যা ফরাসী জাতির বৈশ্বিক বাণিজ্যে পরাশক্তি হয়ে উঠে আসার সাক্ষ্যবহ, তেমনি পদ্মা সেতু হতে যাচ্ছে আগামীর বাংলাদেশের আইকন। সামনে নিশ্চয়ই আমরা পদ্মার চেয়েও আরও বড়, আরও মেগা সব প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করব। কিন্তু আমরা যখন, যাই-ই করি না কেন, পদ্মা সেতুই হবে নতুন বাংলাদেশের প্রতীক। বাঙালীকে স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাই বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ একে অপরের সমার্থক। তেমনি আগামীর বাংলাদেশের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামীর পৃথিবী আগামীর বাংলাদেশকে এই মহীয়সী নারীকে বাদ দিয়ে চিন্তাও করতে পারবে না। আর সে কারণেই ইদানীং কিছু কিছু মানুষের এত গাত্রদাহ, এত অস্থিরতা। সে কারণেই ইদানীং তাদের স্বপ্নে আবারও গর্জে উঠে পঁচাত্তরের হাতিয়ার।

লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *