মিজানুর রহমান স্টাফ রিপোর্টার।
আজ নাটকীয় ও আলোচিত রিফাত হত্যা মামলার রায়
আজ ৪৫৯ দিনের মাথায় নাটকীয় ও আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হবে ইনশাআল্লাহ। ১০ প্রাপ্তবয়স্ক আসামীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করবেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান। গত ১৬ সেপ্টেম্বর রিফাত হত্যা মামলার ১০ প্রাপ্তবয়স্ক আসামীর পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। এর পরে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সকল আসামির পক্ষে-বিপক্ষে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আইনজীবীরা। সবশেষে নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী ও ১ নম্বর সাক্ষী থেকে আসামী হওয়া মিন্নিকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য আদালতে উপস্থাপিত যুক্তিখন্ডন শেষে এ রায়ের দিন ধার্য করেন আদালত।
মামলার প্রধান আসামি মো. সাব্বির আহম্মেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন এবং অন্য একজন আসামি মো. মুসা পলাতক। আসামিদের মধ্যে মিন্নি হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের গেটে কিশোর গ্যাং নয়ন বন্ড বাহিনী প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যা করে কলেজেছাত্র রিফাত শরীফকে। ঘটনার সময় স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি তার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে এমন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। দেশ বিদেশে আলোচিত হয় রিফাত শরীফ হত্যাকান্ড। এ ঘটনায় নিহত রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫-৬ জন অজ্ঞাত আসামির নামে ২৭ জুন বরগুনা থানায় মামলা দায়ের করেন। তার দায়েরকৃত মামলায় নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি ছিল এক নম্বর সাক্ষী। পরবর্তীতে পুলিশ তদন্তে এ হত্যাকান্ডের প্ররোচনার সাথে মিন্নির সম্পৃক্ততা পেয়ে তাকে আসামি করে এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
বরগুনার এ হত্যাকান্ডটি সারাদেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিলো। কিশোর গ্যাং বন্ড বাহিনী প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিন বিকেলেই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন রিফাত শরীফ। এ ঘটনার ছয়দিন পর ২ জুলাই ভোর রাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড।
তদন্তের এক পর্যায়ে তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবির মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ডের সাথে সাক্ষী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সম্পর্ক, বিবাহ ও হত্যা পরিকল্পনার সাথে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়ায় মিন্নিকে এই মামলায় আসামি করেন। রিফাত হত্যাকান্ডের ২০ দিন পর ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রধান সাক্ষী থেকে মিন্নি আসামি হয়ে যাওয়ায় মামলাটি মোড় নেয় অন্যদিকে।
রিফাত হত্যাকান্ডের দুই মাস ছয়দিন পর গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ভাগে বিভক্ত করে দুটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এদের মধ্যে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামি। প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর জন্য ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত চার্জ গঠন করেন।
পরবর্তীতে ৮ জানুয়ারি থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি এ মামলার ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্নের মধ্য দিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের বিরুদ্ধের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেন আদালত। ১৬ সেপ্টেম্বর উভয়পক্ষের যুক্তি-তর্ক শেষে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় ঘোষণার জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষে পিপি অ্যাডভোকেট ভূবন চন্দ্র হাওলাদার আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে এমন আশা করছেন। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা প্রত্যাশা করছেন আসামিরা ন্যায় বিচার পাবেন। এদিকে আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে রিফাত হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে অপরাধীরা- এমনটাই প্রত্যাশা নিহত রিফাতের পরিবারসহ বরগুনাবাসীর।