ব্রাজিলে শুরু হচ্ছে চীনের টিকার ট্রায়াল

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

ভারতের কালোবাজারে ছয়-সাত গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত দুটি ওষুধ। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।

এদিকে ব্রাজিলে কিছুদিন আগে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি সম্ভাব্য করোনা টিকার ট্রায়াল শুরু হয়। এবার দেশটিতে চীনের সরকারি সংস্থা সিনোভ্যাকের তৈরি একটি টিকার ট্রায়ালও শুরু হচ্ছে। ৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে দেয়া হবে এ টিকা।

ভারতে রেমডেসিভির ও টোসিলিজুমাব নামের দুটি ওষুধের সরবরাহ কমে যাওয়ায় ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। এ দুটি ওষুধ করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এ সুযোগে দেশটির একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কালোবাজারে অত্যধিক দামে এ ওষুধ দুটি বিক্রি করছে বলে বিবিসির এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। বিবিসি বলছে, অভিনব শর্মা নামে এক ব্যক্তির চাচা তীব্র জ্বর এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা নিয়ে দিল্লির একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

পরে পরীক্ষায় জানা যায়, তিনি করোনা পজিটিভ। চিকিৎসকরা ওই ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির সংগ্রহ করার পরামর্শ দেন। ভারতে করোনার চিকিৎসায় এ ওষুধটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে চিকিৎসকরা জরুরি মুহূর্তে এ ওষুধটি করোনা রোগীদের প্রয়োগ করতে পারবেন বলে দেশটির ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিয়েছে।

কিন্তু ওষুধটি সংগ্রহ করা এখন অসম্ভব কাজ; কারণ দেশটির কোথাও এখন রেমডেসিভির মিলছে না। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে শর্মার চাচার শরীরের অবনতি ঘটায় ওষুধটি সংগ্রহের জন্য প্রচেষ্টা চালান তিনি। শর্মা বলেন, আমার চোখে পানি চলে আসছে। আমার চাচা তার জীবনের জন্য লড়াই করছেন এবং আমি তার জীবন বাঁচানোর জন্য একটি ওষুধ সংগ্রহের লড়াই করছি; যে ওষুধটি তার জীবন বাঁচাতে পারে।

তিনি বলেন, এক ডজনেরও বেশি মানুষকে মোবাইল ফোনে কল করার পর আমি ওষুধটি পেয়েছি। ওষুধটি আমাকে সাতগুণ বেশি দামে কিনতে হয়েছে। আসলে আমি যে কোনো মূল্যে ওষুধটি সংগ্রহ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার হৃদয় ভেঙে যায় তাদের জন্য যারা এত দামে ওষুধটি কিনতে পারবেন না। শর্মার মতোই দিল্লিতে এখন অনেক মানুষ এ ওষুধটির জন্য হাহাকার করছেন। চড়া দামেও ফার্মেসিগুলোতে ওষুধটি মিলছে না। তবে কালোবাজারে কয়েকগুণ বেশি দামি বিক্রি হচ্ছে; যা কেনার সামর্থ্য নেই অনেকের।

কালাবাজারির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ওষুধ বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন বিবিসির প্রতিনিধি। তাকে ওষুধটি সংগ্রহ করে দিতে রাজি হন তিনি। নিজেকে ওষুধ ব্যবসায়ী হিসেবে দাবি করে ওই ব্যক্তি বলেন, আমি আপনাকে তিন ফাইল দিতে পারি। কিন্তু প্রত্যেক ফাইলের জন্য ৩০ হাজার রুপি দিতে হবে। দেশটিতে সরকারিভাবে এ ওষুধের প্রত্যেক ফাইলের মূল্য ৫ হাজার ৪০০ রুপি নির্ধারণ করা হয়েছে।

সাধারণত একজন করোনা রোগীর জন্য ওষুধটির ৫ থেকে ৬টি ডোজের প্রয়োজন হয়। আরেক ব্যক্তি প্রত্যেক ফাইল রেমডেসিভিরের জন্য ৩৮ হাজার রুপি চান।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে করোনা রোগীদের সুস্থতার সময় ১৫ দিন থেকে ১১ দিনে কমিয়ে আনতে রেমডেসিভির ভূমিকা রাখছে বলে উঠে আসে। করোনার চিকিৎসায় বিশ্বজুড়ে এ ওষুধটির চাহিদা বাড়লেও সরবরাহে মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে।

এদিকে ব্রাজিলের সবচেয়ে সম্পদশালী ও সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ সাও পাওলোর গভর্নর জোয়াও দোরিয়া বলেছেন, ২০ জুলাই থেকে আমরা চীনের সরকারি সংস্থা সিনোভ্যাকের তৈরি সম্ভাব্য একটি করোনাভাইরাসের টিকা মানবদেহে প্রয়োগ শুরু করব। এটা বুটানটান ইন্সটিটিউটের (ব্রাজিলের শীর্ষ গবেষণা কেন্দ্র) অংশীদারিত্বে চালানো হবে। সাও পাওলোর ১২টি গবেষণা কেন্দ্র ও অন্যান্য রাজ্যের ৪টি কেন্দ্র থেকে ৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে পরীক্ষামূলকভাবে দেয়া হবে এ টিকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.